Header Ads

Biocomic

বাইওকেমিক 

বাইয়স একটি গ্রীক শব্দ; ইহার অর্থ লাইফ বা জীবন। কেমিষ্ট্রী শব্দের অর্থ রসায়ন। সুতরাং বাইওকেমিষ্ট্রী শব্দের অর্থ জীবন-রসায়ন বা জৈব রসায়ন। 

আমাদের শরীর সাধারণতঃ অর্গ্যানিক অর্থাৎ জান্তব এবং ইন-অর্গ্যানিক অর্থাৎ ধাতব- এই দুই প্রকার পদার্থের সাহায্যে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অস্থি, মজ্জা, মাংস প্রভৃতি আবশ্যকীয় দ্রব্যদি নির্মাণ করিয়া জীবনকে পুষ্ট, বর্ধিত ও রক্ষা করিতেছে। জীবিত দেহে অহরহ ধাতব ও জান্তব এই উভয় প্রকার পদার্থের আবশ্যকানুযায়ী আদান-প্রদানের ফলেই জীব সুস্থ্য থাকে। জীবিত দেহে কখনও জান্তব পদার্থের অভাব হয় না, কেবল ধাতব পদার্থেরই অভাব হইয়া থাকে। যখন কোনও ক্রমে এই ধাতব পদার্থের অভাব হয়, তখন যে যে ধাতব পদার্থের অভাব হইয়াছে তাহার সহিত সম্বন্ধযুক্ত জান্তব পদার্থনিচয়ও অকার্যকরী হইয়া উঠে। ঐ অভাবগ্রস্ত ধাতব পদার্থসমূহ ঔষধরূপে আভ্যন্তরীন গ্রহণের ফলে অভাবের পুরণ হয় এবং শারীরিক বিশৃঙ্খলা দূরীভূত হয়। জীবিতাবস্থায় এই যে রাসায়নিক ক্রিয়া চলিতেছে, ইহাই জৈব রসায়ন নামে অভিহিত।  [ ডাঃ বিজয়কুমার বসু, বাইওকেমিক কম্পারেটিভ মেটিরিয়া মেডিকা ও থেরাপিউটিক্স] 

বাইওকেমিক চিকিৎসার উৎপত্তি

১৮৩২ খৃষ্টাব্দে জার্মানী একজন চিকিৎসক সংবাদপত্রে প্রকাশ করেন-“মানব শরীরের অত্যাবশ্যকীয় উপকরণসমূহই উৎকৃষ্ট ঔষধ।”  এরপর একই পত্রিকায় 1১৮৬৪ খৃষ্টাব্দে অপর একজন চিকিৎসক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন-“ মানুষ্য শরীরের যে যে স্থানে যে যে অত্যাবশ্যকীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত, সেই সেই অত্যাবশ্যকীয় পদার্থসমূহই ঐ সমস্ত স্থানে কার্যকরী।” ইহার পর ১৮৭৩ খৃষ্টাব্দে জার্মানীয় অন্তঃপাতী ওল্ডেনবার্গ নিবাসী ডাক্তার মেডি শুসলার “লিপজিগ হোমিওপ্যাথিক গেজেট” নামক একখানি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লিখেন যে, তিনি এক বৎসর ধরিয়া রোগারোগ্যের জন্য এই সমস্ত টিশু ঔষধ পরীক্ষা করিয়া কৃতকার্য হইয়াছেন। এখন বাইওকেমিক চিকিৎসার বিষয় সর্বজন স্বীকৃত। 

বাইওকেমিষ্ট্রী ও হোমিওপ্যাথির প্রভেদ

কেহ কেহ বলেন যে, বাইওকেমিষ্ট্রী ও হোমিওপ্যাথি একই পদার্থ; কিন্তু ইহা ঠিক নয়। উভয় চিকিৎসার প্রণালীও সম্পূর্ণ বিভিন্ন। বাইওকেমিকের মূলসূত্র হইতেছে-অভাবের পূরণ করা; অর্থাৎ যখন যে বস্তুর অভাব বা স্বল্পতা লক্ষিত হইবে, তখনই ঠিক সেই পদার্থের দ্বারা উক্ত অভাব বা স্বল্পতা লক্ষিত হইবে, তখনই ঠিক সেই পদার্থের দ্বারা উক্ত অভাব বা স্বল্পতা পূরণ করা। অভাবের পূরণ হইলে রোগলক্ষণেরই শান্তি হইবে। কিন্তু হোমিওপ্যাথির মূলসূত্র হইতেছে-“সমঃ সমং শময়িতি” অর্থাৎ সুস্থ্ শরীরে যে ঔষধ সেবন দ্বারা যে যে লক্ষণ উৎপন্ন হয়, পীড়িত দেহে সেই সেই লক্ষণ দৃষ্ট হইলে সূক্ষ্ণ মাত্রায় সেই ঔষধ প্রদান করিলে সেই সকল লক্ষণ দূরীভূত হইয়া পীড়া আরোগ্য হয়। সুস্থ শরীরে কোন কোন নিয়মে কি প্রকার মাত্রায় ঔষধ সেবন করিলে লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়, তাহা ভাল করিয়া জানিতে ইচ্ছা করিলে হ্যানিম্যানের অর্গ্যানন পাঠ করা  যেতে পারে।

কিভাবে ধাতব লবণসমূহ গ্রহণ করা 

নিশ্বাস পথে বায়ু গ্রহণ, আহার, পানীয়, সূর্যকিরণাদির দ্বারা ধাতব লবণসমূহ শরীরাভ্যন্তরে গৃহীত হইয়া থাকে। ভুক্ত ও পীত দ্রব্য সকল লালা, পাকস্থলী রস, ক্লোমরস প্রভৃতির সহিত মিলিত হইয়া ক্রমশঃ রক্তরূপে পরিণত হয়। পরে এই রক্ত ফুসফুসে প্রবেশ করিয়া নিশ্বাস দ্বার গৃহীত অক্সিজেনের সাহায্যে বিশোধিত হইয়া ধমনী ও কৈশিকা নাড়ীর সাহায্যে সর্বাঙ্গে পরিচালিত হইয়া প্রত্যেক টিশুকে তাহার অভাবানুযায়ী ধাতব লবণ সরবরাহ করিয়া থাকে। 

জীব শরীরের ন্যায় বৃক্ষ লতাদিও মৃত্তিকা, জল, বায়ু প্রভৃতির দ্বারা ধাতব লবণসমূহ গ্রহণ করিয়া থাকে। যদি কোন কারণেভূমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হইয়া যায়, অথবা উপযুক্ত আলো বা বাতাসের অভাব হয় এবং যদি তাহা শীগ্র পূর্ণ না হয়, তাহা হইলে বৃক্ষ লতাদি শীর্ণ হইয়া যায়। আমরা যদি এই সমস্ত অপুষ্টিকর বৃক্ষের ফল, শীর্ণ শাকপাতা ইত্যাদি ভক্ষণ করি, তাহা হইলে আমরাও বৃক্ষলতাদির ন্যায় অল্প পরিমাণে ধাতব লবণ গ্রহণের ফলে শীর্ণ হইয়া পড়িব। এজন্য সবসময় খাদ্যদ্রব্যাদি বিচার করিয়া গ্রহণ না করিলে অসুস্থ হইয়া পড়িতে হয়।

ঔষধের পর্যায়, অনুপর্যায় ও মিশ্রণ ব্যবহার

বাইওকেমিক ঔষধসমূহ অনেক সময় ২/৩টি একসঙ্গে ব্যবহার করিবার প্রয়োজন হয়। প্রথম ঔষধটি দিবার পর দ্বিতীয় ঔষধ এবং  তাহার পর প্রথম ঔষধ, আবার দ্বিতীয় ঔষধ- এইভাবে ঔষধ প্রয়োগকে পর্যায়ক্রমে ঔষধ ব্যবহার করা বলে। সময় সময় দুইটি ঔষধ পর্যায়ক্রমে ব্যবহারকালীন অন্য ঔষধও ২/১ মাত্রা করিয়া দিবার প্রয়োজন হয়; এইরূপ ব্যবহারকে অনুপর্যায়ক্রমে ঔষধ ব্যবহার বলে। এক ঔষধের সহিত অন্য ঔষধ মিশ্রিত করিয়া ব্যবহারকে মিশ্রণ ব্যবহার বলে। কোন রোগীকে ঔষধ দিবার সময় ঔষধের ক্রিয়া বৃদ্ধি করিবার জন্য অথবা বলকরণের জন্য ২/১ মাত্রা ক্যাল্ক-ফস দিতে হয়; ঐ ক্ষেত্রে ক্যাল্ক-ফসকে অনুপর্যায় ঔষধ বলা যাইতে পারে। 

ঔষধের মিশ্রণ বিধি

কাহারও কাহারও মতে ঔষধ পর্যায়ক্রমে ব্যবহৃত করা কর্তব্য; আমার কেহ কেহ বলেন যে, ঔষধ মিশ্রিত করিয়া দেওয়াই ভাল; ঔষধের ক্রিয়ার ব্যতিক্রম যখন হয় না, তখন উভয় প্রথাই ভাল। ঔষধ মিশ্রিত করিয়া ব্যবহার করিতে হইলে ফসফেট সকল একত্রে, মিউরিয়েটগুলি একত্রে এবং সালফেটগুলি একত্রে মিশ্রিত করিয়া দিতে হয়। সালফেটের সহিত মিউরিয়েটের সহিত ফসফেটের মিশ্রণ যুক্তিসঙ্গত নহে। সাইলিসিয়া সকলের সহিতই মিশ্রিত করা যায়। একটি রোগীক্ষেত্রে তিনটি ঔষধের অধিক ঔষধ ব্যবহার করিবার বড় একটা প্রয়োজন হয় না, আর না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। তিনটি ঔষধ ব্যবহার করিতে হইলে-যদি মিশ্রণ প্রথাই অনুমোদিত হয়, তবে দুইটি ঔষুধ মিশ্রিত করিয়া একটি ঔষধ পর্যায়ক্রমে দেওয়া কর্তব্য। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.