Header Ads

নাক্স ভোমিকা ( Nux Vomica ) [ Nux -v নাক্স ]

নাক্স ভোমিকা ( Nux Vomica ) [ পয়জন-নাট নামক ফল, কুঁচিলা ]
নাক্স ভোমিকা ( Nux Vomica ) [ পয়জন-নাট নামক ফল, কুঁচিলা ]


নাক্স ভোমিকা (Nux Vomica) 

[পয়জন-নাট নামক ফল, কুঁচিলা ]

প্রুভারের নাম ঃ ডা. হ্যানিম্যান

উৎসঃ এই ঔষধের উৎস কুচিলা নামক ফলের বীজ। ইহার গাছ দেখিতে শেওড়া গাছের মত। ফল দেখিতে অকেটা কমলা লেবুর মত, অসংখ্য বীজ বিশিষ্ট। এই বীজ ভীষণ তিক্ত ও বিষাক্ত। এই বিষ প্রয়োগ করিয়া প্রাণী হত্যা ও ইদুর মরার বিষ তৈরী করা হয়ে থাকে। তাই কোন ভাবেই এর ভেষজ হোমিওপ্যাথিক মতে শক্তিকৃত নয় এমন অবস্থায় খাওয়া যাবে না। তবে হোমিওফার্মাকোপিয়া অনুযায়ী শক্তিকৃত ঔষধটি একটি পলিক্রেষ্ট ঔষধ এবং এর ব্যবহার ব্যপক হরে হয়ে থাকে। 

অন্যান্য নামঃ পয়জন নাট, ট্রিকনিয়া, কারস্কর, কুঁচিলা। 

প্রাপ্তিস্থানঃ ইহা সরা ভারতবর্ষের বিভিন্ন বনভূমিতে বিশেষ করিয়া দক্ষিণ ভারতের প্রায় চারহাজার ফুট উঁচু স্থানে জন্মে থাকে। ইহা ছাড়া বাংলাদেশ ও চিনে পাওয়া যায়।  

ক্রিয়াস্থলঃ দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গে নাক্স-ভমিকা ক্রিয়া প্রকাশ করে। যেমন-স্পাইনাল কর্ড মস্তিস্ক, মন হজম পথ, শ্বাসযন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র, মূত্রযন্ত্র, স্নায়ু, লিভার, রেকটাম। 

কৃশ, উত্তেজনাপ্রবণ, সতর্ক, হিংসুক ব্যক্তিদের পক্ষে উপযোগী, তাহাদের চুল কাল, পিত্ত বা রক্তপ্রধান ধাতুপ্রকৃতি; ঝগড়াটে, ঈর্ষাপরায়ণ এবং বিদ্বেষযুক্ত; স্নায়বিক এবং বিষাদভাবযুক্ত। কৃশ, কোপন, স্নায়বিক প্রকৃতির অমিতাচারী ব্যক্তি, যাহারা অজীর্ণ ও অর্শরোগে ভোগে।

 “যে সকল ব্যক্তি অত্যুৎসাহপূর্ণ, যাহাদের স্বভাব উত্তেজনাপ্রবণ এবং অধৈর্য, যাহারা ক্রোধী, হিংসুক ও প্রবঞ্চক, নাক্স প্রধানতঃ তাহাদের ক্ষেত্রেই সাফল্যের সহিত প্রযুক্ত হয়”-হ্যানিম্যান। 

উত্তেজনার সহিত উৎকন্ঠা এবং আত্মহত্যা করার প্রবৃত্তি কিন্তু মরিতে ভয় পায়। বিষাদ বায়ুরোগগ্রস্ত, সাহিত্যরসিক, অধ্যয়নশীল ব্যক্তি, যাহার অধিকাংশ সময়েই ঘরের মধ্যে থাকে; দৈহিক পরিশ্রমের অভাব জান্য পাকাশয়িক ও উদরসংক্রান্ত রোগ এবং কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগে; বিশেষতঃ মদ্যপায়ী ব্যক্তিগণের উদররোগ। বাহ্যিক ধারণায়, শব্দে, গন্ধে, আলোকে, সংঙ্গীতে অত্যনুভূতিযুক্ত; সামান্য অসুখে অত্যন্ত কাতর হইয়া পড়ে; প্রতিটি নির্দোষ কথায় দোষ গ্রহণ করে। 





যে সকল ব্যক্তি সাবধানী, সতর্ক কিন্তু সহজেই উত্তেজিত ও ক্রুদ্ধ হওয়ার স্বভাবযুক্ত খিট্ খিটে এবং নাছোড়বান্দা। কফিপান, তামাকসেবন, মদ্যজাতীয় উত্তেজক দ্রব্য পান, অতিরিক্ত মসলাদার ও রসাল খাদ্যগ্রহন, অতিভোজন; দীর্ঘকাল যাবত রিনবচ্ছিন্ন মানসিক অতিপরিশ্রম, বসিয়া বসিয়া দিন কাটান, অনিদ্রা, সগন্ধিদ্রব্য ব্যবহার অথবা পেটেন্ট ঔষধ সেবন, ঠান্ডা পাথরের উপর বসিয়া থাকা, বিশেষতঃ গ্রীষ্মকালে ঠান্ডা পাথরের উপর বসিয়া থাকার কুফলজনিত পীড়া। যে সকল রোগী মিশ্র ঔষধ, তিক্ত ঔষধ, ভৈসজ্যবটিকা, টোটকা ঔষধ, হাতুডিয়া চিকিৎসকের ঔষধ, বিশেষতঃ উগ্রগন্ধযুক্ত অথবা গরম ঔষধ দ্বারা চিকিৎসিত হইয়াছে তাহাদের চিকিৎসা আরম্ভকালে নাক্স একটি অত্যুৎকৃষ্ট ঔষধ, কিন্তু তাহা হইলেও লক্ষণসাদৃশ্য থাকা চাই। 

আক্ষেপ, কিন্তু তৎসহ জ্ঞান থাকে; ক্রোধ, মানসিক উত্তেজনা, স্পর্শ ও সঞ্চালনে বৃদ্ধি। বেদনা-ঝিনঝিনিধরার ন্যায়, সূচীবিদ্ধবৎ, তীব্র, কন্ কনানির ন্যায়, সঞ্চালনে ও স্পর্শে বৃদ্ধি। উগ্রগন্ধে, প্রাতঃকালে, আহারের পর, প্রত্যেকটি প্রসববেদনার আবেগের পর মূর্চা যায়ার প্রবণতা। 

শয়ন করিবার নির্দিষ্ট সময়ের কয়েকঘন্টা পূর্বে, সন্ধ্যাকালে; বসিয়া থাকার সময় বা পড়িবার সময় না ঘুমািইয়া পারে না, কিন্তু ভোর 3টা বা 4টার সময় জাগিয়া ওঠে; তারপর আবার সকাল পর্যন্ত স্বপ্ন দেখার সহিত ঘুমাইতে থাকে; ঐ সময় তাহাকে জাগাইতে কষ্ট হয় এবং জাগিয়া সে ক্লান্ত ও দূর্বল বোধ করে। সর্দি, শিশুর নাক বুজিয়া যায়, সর্দিস্রাব রাত্রিকালে শুষ্ক, কিন্তু দিবাভাগে তরল গরম গৃহে বৃদ্ধি, ঠান্ড বাতাসে উপশম, ঠান্ডা স্থানে, পাথরের সিঁড়িতে বসিয়া থাকিলে উপশম। 

উদ্গার-টক, তিক্ত; প্রতিদিন প্রাতঃকালে বমি, বমিবমি ভাব ও বমন, তৎসহ মানসিক উদ্যমহীনতা; আহারের পর উদ্গার। 

বিবমিষা-অধিক আহারের পর, প্রাতঃকালে, ধুমপান করিলে;

মনে হয়, “যদি আমি কোন ভাবে বমি করিতে পারিতাম তাহা হইলে অনেকটা ভাল থাকিতাম্” 

পাকস্থলী আহারের এক বা দুই ঘন্টা পরে পাথরের ন্যয় চাপ বোধ। মুখদিয়ে জল উঠা, উদরে টান টানবোধ, কোমরের কাপড় ঢিলা করয়া দিতে হয়; আহারের পর দুই-তিন ঘন্টা যাবৎ মানসিক পরিশ্রম করিতে পারে না; মধ্যাহ্নভোজনের পর ঘুম পায়; উৎকন্ঠা, দূশ্চিন্তা, কফিপান, কড়া ঔষধ সেবন, রাত্রিজাগরন, ভোজন ও বিলাস প্রভৃতি হইতে এই অবস্থা। কোষ্ঠবদ্ধতা, তৎসহ পূনঃপূনঃ নিস্ফল মলবেগ, প্রতিবারে সামান্য পরিমাণ মল নির্গত হয়, মনে হয় যেন সবটা মল নির্গত হইল না। পুনঃপুনঃ মলত্যাগপ্রবৃত্তি, উৎকষ্ঠা, নিষ্ফলতা; মলত্যাগের পর কিছু ক্ষণের জন্য উপশম; প্রাতঃকালে নিদ্রাভঙ্গের পর, মানসিক পরিশ্রমের পর ঐরূপ নিষ্ফল মলপ্রবৃত্তি। যে সকল ব্যক্তি সারাজীবন বিরেচক ঔষধ সেবন করিয়াছেন, তাহাদের পর্যায়ক্রমে কোষ্ঠবদ্ধতা ও উদরাময়।  

ঋতুস্রাব-নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে, প্রচুর, দীর্ঘকালস্থায়ী; অথবা ঋতুর প্রারম্ভে এবং পরে অসুস্থতাসহ, কায়েকদিন বেশী স্থায়ী হয়; প্রতি দুই সপ্তাহ অন্তর ঋতুস্রাব; অনিয়মিত ঋতুস্রাব; কখনও ঠিক সময়ে স্রাবটি উপস্থিত হয় না; থামিয়া যায় আবার আরম্ভ হয়; ঋতুকালে এবং পরে পুরাতন উপসর্গগুলির বৃদ্ধি হয়। 

প্রসববেদনা, তীব্র, আক্ষেপিক, উহার ফলে মলবেগ ও মূত্রবেগের উৎপত্তি হয়; বেদনা পৃষ্ঠদেশেই অধিক, রোগিনী গরম ঘরে থাকিতে চান। 

অবরুদ্ধ অন্ত্রবৃদ্ধি, বিশেষতঃ নাভিদেশসংক্রান্ত। 

পৃষ্ঠবেদনা; শয্যায় প্রথমে উঠিয়া বসিয়া তারপর পাশ ফিরিতে হয়, ধাতুদৌর্বল্য ও হস্তমৈথুনজনিত কটিবাত। 

ঠান্ডা ও ঠান্ডা বাতাসে বিতৃষ্ণা; সামান্য নড়াচড়ায় শীত শীত বোধ করে; অনাবৃত হইলে শীতশীত বোধ করে;জ্বরের প্রতেকটি অবস্থায়, শীতের সময়, উত্তাপের সময় এবং ঘর্মের সময় আবৃত থাকিতে বাধ্য হয়। জ্বর-অত্যন্ত উত্তাপ, সারাদেহে জ্বালাকর উষ্ণতা, মুখ মন্ডল আরক্তিম ও উত্তপ্ত, কিন্তু তথাপি রোগী নড়াচড়া করিতে পারে না এবং অনাবৃত হইলেই শীত শীত বোধ করে। 

রোগের কারণঃ ক্রোধ, কফি বা মদ্যপান, ব্যভিচার, হস্তমৈথুন, অতিরিক্ত ইন্দ্রিয় সেবা, উত্তেজক কোন গরম ঔষধ খেয়ে পাকস্থলীর উত্তেজনার ফলে হিক্কা বিলাসবহুল জীবন যাপন, অনিয়মিত পানাহার, অতিরিক্ত ভোজন, কোন রকম ব্যায়াম না করা, ঘুমের ব্যাঘাত খোলা ঠান্ডা বাতাস।

সম্বন্ধ-প্রায় সব রোগেই অনুপুরক সালফারপ্রতিকুল-জিঙ্ক; নাক্সের পূর্বে বা পরে ব্যবহার্য নহে। আর্স, ইপি, ফস, সিপিয়া, সালফের পর ভাল ফল পাওয়া যায় । নাক্সের পর ভাল কাজ করে-ব্রায়ো, পালস, সালফ। নাক্স শয়নকালে অথবা তার চেয়েও ভাল শয়নের কয়েক ঘন্টা পূর্বে প্রয়োগ করা উচিত; ইহা শরীর ও মনের বিশ্রামকালে সর্বপেক্ষা উত্তম ক্রিয়া প্রকাশ করে। 

[সতর্কতাঃ যে কোন ঔষধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সেবন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ]

1 টি মন্তব্য:

Blogger দ্বারা পরিচালিত.