Header Ads

টিউবারকুলিনাম (Tuberculinum) [টিউবারকিউলোসিস জীবানু হইতে প্রস্তুত নোসড ঔষধ]

টিউবারকুলিনাম (Tuberculinum)

টিউবারকুলিনাম (Tuberculinum)
টিউবারকুলিনাম (Tuberculinum)
এই ঔষধটির কথা মূলগ্রন্থে বলা হইয়াছে কিন্তু তবু আরও কিছু বলিবার আছে। মহামান্য ডাঃ কেন্ট বলিয়াছেন যে প্রত্যেক যুগেই মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থা পরিবর্তিত হয়, তখন জীবনপ্রণালীরও পরিবর্তন ঘটে, রোগসমূহের প্রকৃতি বদলায় এবং ঔষধক্রিয়ার মধ্যেও নূতনত্বের প্রয়োজন হয়। ডাঃ হুইলার তাঁহার প্রসিদ্ধ Principles and Practice গ্রন্থে এই কথাটিকেই বিস্তৃত করিয়া প্রমাণ করিয়াছেন যে বর্তমান কালে সমাজে টিউবারকুলার ধাতুর লোকসংখ্যা যথেষ্ট বাড়িয়া উঠিয়াছে এবং সেই জন্য টিউবারকুলিনাম ঔষধটির উপযোগিতাও অন্যান্য ঔষধের তুলনায় যথেষ্ট বেশী হইয়া পড়িয়াছে।  অবশ্য টিউবারকুলার ধাতু কথাটির সহিত প্রকৃত টিউবারকুলোসিস রোগের কোন সম্বন্ধ আছে বলিয়া চিন্তিত হইবার কারণ নাই।  ইহা সোরার সহিত সিফিলিস বা সাইকোসিসের সংমিশ্রণজাত এক বিশেষ প্রকার ধাতুগত বিশৃঙ্খল অবস্থা।  ইহা যক্ষারোগাগ্রস্ত অবস্থা নহে, যক্ষা সম্ভব অবস্থা, অর্থাৎ এই রূপ অবস্থা যে তাহা কুচিকিৎসিত বা অবহেলিত হইলে পরে যক্ষারোগের সৃষ্টি হওয়া অসম্ভব নহে।  ইহাকে যক্ষারোগের প্রারম্ভিক অবস্থাও বলা যাইতে পারে অর্থাৎ ইহা একরূপ অবস্থা যখন ফুসফুস কোনরূপ গুটিকা সঞ্চার বা Cavity উৎপন্ন হয় নাই। যক্ষারোগগ্রস্ত পিতামাতার সন্তানগণের দেহে, অনেক ক্ষেত্রে এরূপ অবস্থার বিকাশ দেখিতে পাওয়া যায়।  

টিউবারকুলিনাম নামটি শুনিয়া এই ঔষধ ব্যবহার করিবার কালে কোন ভয়ের কারণ নাই। বহুভাব বহু চিকিৎসক পরীক্ষা করিয়াছেন যে 10X শক্তির উর্ধ্ব কোন ঔষধেই ঔষধকণার অস্তিত্ব থাকে না এবং তখন উহা প্রয়োগে কোনরূপ ক্ষতির অর্থাৎ রোগসংক্রমণের সম্ভাবনা নাই। কিন্তু একটি কথা আছে।  এরূপ ফুসফুস সংক্রান্ত যক্ষারোগের পক্ষে উচ্চশক্তির টিউবারকুলিনাম একটি সাংঘাতিক ঔষধ। ডাঃ নোবেল মনট্রিক্স পুনঃপুনঃ বলিয়াছেন, “১০০০ শক্তির টিউবারকুলিনাম ফুসফুস সংক্রান্ত যক্ষারোগের পক্ষে একটি সাংঘাতিক ঔষধ ব্যবস্থা।” 

এখানে ব্যাপারটি একটু ভালভাবে বুঝা প্রয়োজন। ডাঃ কেন্ট বলিয়াছেন যদি ঔষধ লক্ষণ ও রোগীর লক্ষণ সম্পূর্ণভাবে মিলিয়া যায় তাহা হইলে অত্যুচ্চশক্তিতে ঔষধটি প্রয়োগ করা হইলে জীবনীশক্তির মধ্যে রোগবিষ দূর করিবার জন্য যে প্রবল চেষ্টা বা আলোড়ন উপস্থিত হয়, তাহা রোগীর রোগীর পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব হইয়া পড়ে এবং মৃত্যু আসিয়া তাহার সকল যন্ত্রণার অবসান করে।  কেবলমাত্র টিউবারকুলিনাম নয়, ফসফরাস, ষ্ট্যানাম, সালফার প্রভৃতি ঔষধগুলি সম্বন্ধেও ঐ একই কথা।  কিন্তু ঔষধলক্ষণ ও রোগীলক্ষণের মধ্যে সম্পূর্ণ মিল না থাকিয়া আংশিক মিল থাকিলে অথবা ঔষধটি নিম্নতর শক্তির হইলে এরূপ অবস্থা ঘটে না, বরং রোগী সময়ে সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে উপশম বোধ করে।  টিউবারকুলিনাম ঔষধটি প্রকৃত যক্ষাজীবাণু হইতে প্রস্তুত, সুতরাং প্রকৃত যক্ষাপ্রবৃদ্ধ অবস্থায় কখনও ২০০ শক্তির উর্ধে্ব ব্যবহার করা উচিত নয়। 

বাস্তবিক টিউবারকুলিনাম ঔষধটির কোন বিশেষ লক্ষণ নাই; মানুষটিকে চিনিয়া লইয়াই ইহার ব্যবহার।  লম্বা, কৃশ যুবক যুবতী, বক্ষস্থলটি সরু, পায়রার বুকের ন্যায়, সম্ভবতঃ পিতামাতার দেহ হইতে রোগপ্রবণতাটি প্রাপ্ত হইয়াছে। অত্যন্ত ছটফটে কিন্তু ভীষণ বুদ্ধি।  কোন কিছুতেই মনঃসংযোগ করিতে পারে না। পরের মনে ব্যথা দেয়।  মা, বাবাকে সন্তুষ্ট করিতে চায় না, ছোট ভাইবোনকে মারধর করে। প্রায়ই সর্প বা কুকুরের স্বপ্ন দেখে। অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতি, দেশ বিদেশে বেড়াইতে চায়, অন্ততঃ সেই কল্পনা করে।  সামান্য কারণে সর্দি লাগে, পুনঃপুন এ রোগ সে রোগ দেখা দেয়।  ঠান্ডা লাগিলেই সর্দি হয় কিন্তু ঠান্ডায় বেড়ান চাই-ই।  অনেক সময় নিশাঘর্ম দেখা দেয়।  হঠাৎ মেজাজটি গরম হইয়া উঠে, খায় দায় তবু শুকাইয়া যায়।  যাহা হজম করিতে পারে না তাহাই খাইতে চায়। 

এই রোগীর শরীরটিকে শোধরাইয়া, সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করিবার পক্ষে টিউবারকুলিনাম সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধ।  এরূপ বহু রোগীর পুরাতন উদরাময়, কানের পুঁজ, ম্যালেরিয়া জ্বর, মৃগীরোগ প্রভৃতি বহু রোগ টিউবারকুলিনাম দ্বারা সম্পূর্ণভাবে আরোগ্য হইয়াছে। 

কয়েকটি বিশেষ প্রয়োগক্ষেত্র 

বিশৃঙ্খলাযুক্ত সবিরাম জ্বর-ডাঃ কেন্ট বলিয়াছেন, “কতকগুলি দুষ্ট প্রকৃতির সবিরাম জ্বর ( ম্যালেরিয়া জ্বর) পুনঃপুনঃ নুতন করিয়া প্রকাশিত হইতে থাকে।  হয়ত পূর্বে সাইলিসিয়া, ক্যালকেরিয়া বা অন্য কোন গভীরক্রিয় ঔষধ দ্বারা জ্বরটি নিবারিত হইয়াছিল কিন্তু কয়েক সপ্তাহ মধ্যেই সামান্য ঠান্ডা লাগিয়া, সামান্য ক্লান্তিকর পরিশ্রমের ফলে, সামান্য অতিভোজনে, সামান্য পেট গরম হওয়ার পর জ্বরটি ফিরিয়া আসিতে থাকিলে।  এরূপ অবস্থায় টিউবাকুলিনামই একমাত্র প্রয়োজনীয় ঔষধ।”  উহা রোগীর ধাতুদোষ সংশোধন করিয়া তাহাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করিবে।  

জ্বর- রেমিটেন্ট প্রকৃতির জ্বর, বিশেষ কোন লক্ষণ পাওয়া যায় না।  এরূপ অবস্থায় ডাঃ ম্যাকফার্সন নিম্নশক্তির ঔষধ দুই ঘন্টা অন্তর প্রয়োগ করিতে উপদেশে দিয়াছেন এবং বলিয়াছেন যে নিজে এইরূপ প্রয়োগ দ্বারা কখনও ব্যর্থ হন নাই। 

নিউমোনিয়া- ডাঃ আর্নুলপি বলেন যে লোবার নিউমোনিয়া রোগে ইহা ফসফরাস ও এন্টিম টার্ট অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।  কাশি যখন কঠিন থাকে, সারা বুকে রেলি শব্দ পাওয়া যায় তখন টিউবারকুলিনাম একটি অপূর্ব ঔষধ। ডাঃ ডিউই ইহাকে ৬এক্স হইতে ৩০এক্স শক্তিতে এবং পুনঃপুনঃ ব্যবহার করিতে নির্দেশ দিয়াছেন। 

প্রতিশ্যায়- রোগীর পুনঃ পুনঃ সর্দি লাগে, সর্দি লাগিলেই হাঁচি হইতে থাকে, রোগী খায় দায় কিন্তু শুকাইতে থাকে।  অত্যন্ত অস্থির প্রকৃতি, সর্দি লাগিলেও ঠান্ডা হওয়া ভালবাসে।  এরূপ অবস্থায় টিউবারকুলিনাম ধাতু দোষটি সংশোধন করে। 

শিরঃপীড়া- দারুণ শিরঃপীড়া, সকালে আরম্ভ হয়, কখন কখন উহার সহিত উদরাময় থাকে, রোগীর পুনঃপুনঃ বাতকর্ম হইতে থাকে। শিরঃপীড়া প্রতি এক বা দুই সপ্তাহ অন্তর দেখা দেয়; আবহাওয়া র্আদ্র হইলে, রোগীর অধিক খাটুনি হইলে, মানসিক উত্তেজনা দেখা দিলে শিরঃপীড়াটি উপস্থিত হয়। 

স্ত্রীরোগ- স্তনগ্রন্থির অর্বুদ, নিয়মিত সময়ের পূর্বে ঋতুপ্রকাশ হইয়া দীর্ঘদিন থাকে অথবা সামান্য মাত্র ঋতুস্রাবের সাথে পেটে বেদনা দেখা দেয়। 

উম্মাদরোগ- রোগিণী সর্প ও কুকুরের স্বপ্ন দেখেন; মনে করেন তাহার পেটের মধ্যে একটি সর্প আছে এবং উহা নড়িয়া বেড়াইতেছে।  দীর্ঘ কুড়ি বৎসরের পুরাতন একটি উম্মাদ রোগিণী এই লক্ষণে টিউবারকুলিনাম প্রয়োগে আরোগ্য হইয়াছিলেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.