Header Ads

একিউট এ্যাবডোমেন (Acute Abdomen)


একিউট এ্যাবডোমেন (Acute Abdomen)

ডা.রাতুল মাহমুদ সজল
বি.এইচ.এম.এস (প্রভাষক, রহনপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, চাঁপাই নবাবগঞ্জ)
মোবাইলঃ ০১৭২০-৬৬৭১১৭

এ্যাকিউট এ্যাবডোমেন বলতে পরিপাকতন্ত্রের বা পেটের এমন এক মারাত্মক যন্ত্রনাদায়ক অবস্থাকে বোঝায় যেখানে খুব দ্রুত সার্জারীর প্রয়োজন হতে পারে। একিউট এ্যাবডোমেন কোন একক বা আলাদা রোগ নয়, পেটের অনেক রোগেই এ্যাকিউট এ্যাবডোমেন এর অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।

যে সকল রোগে এ্যাকিউট এ্যাবডোমেন হতে পারে

অন্ত্রের অনেক রোগে এ্যাকিউট এ্যাবডোমেন এর লক্ষন দেখা দিতে পারে। সার্জারীতে এদের ৫ টি 

শ্রেণীতে বিভক্ত করে বোঝানো হয়েছে। নীম্নে ছক আকারে তাদের বোঝানো হলো। কারনগুলি 

মনে রাখার সুবিধার্থে PORII শব্দটি মনে রাখবো।
১. ছিদ্র হওয়া জনিত বা Perforated
●. পার্ফোরেটেড ডুওডেনাল আলসার।
●. পার্ফোরেটেড গ্যাস্ট্রিক আলসার।
●. পার্ফোরেটেড ডাইভার্টিকুলাম।
●. পার্ফোরেটেড এ্যাপেন্ডিক্স।
●. বিলিয়ারী পেরিটোনাইটিস ইত্যাদি।
২. প্রতিবন্ধকতাজনিত বা Obstructive
●. একিউট রিটেনশন অব ইউরিন।
●. ইনটেস্টাইনাল অবস্স্ট্রাকশান।
●. বিলিয়ারী কলিক।
●. ইউরেটারিক কলিক।
●. ইন্টাসাসেপশন ইত্যাদি।
৩. ফেটে যাওয়া জনিত বা Ruptured
●. রাপচারড্ এক্টোপিক প্রেগনেন্সী।
●. রাপচারড এ্যাবডোমিনাল এ্যাওর্টিক এ্যানিউরেজম।

৪. রক্ত সঞ্চালনের ব্যাহত হওয়া জনিত বা Inflammatory
⤿ অন্ত্র সংক্রান্ত
         ●. ভলভিউলাস।
         ●. স্ট্র্যাঙ্গুলেটেড হার্নিয়া।
⤿ অন্ত্র বর্হি:ভূত
         ●. ওভারিয়ান সিস্টের টর্সোন।
         ●. অন্ডকোষের টর্সোন।     
৫. প্রদাহজনিত বা Inflammatory

●. একিউট এ্যাপেন্ডিসাইটিস
●. একিউট কলিসিস্টাইটিস
●. একিউট ডাইভার্টিকুলাইটিস।
●. একিউট সালফিঞ্জাইটিস।
●. একিউট প্যাংক্রিয়াটাইটিস ইত্যাদি।

 ক্লিনিক্যাল ফিচার (Clinical features)
লক্ষন বা Symptoms
v  কিছু উত্তেজক কারনের ইতিহাস থাকতে পারেযেমন

ü  অতীতে পেপটিক আলসারের ইতিহাস।

ü  মাদক সেবনবিশেষতঃ এ্যালকোহল সেবনের ইতিহাস।

ü  বিভিন্ন ঔষধ সেবনযেমন ব্যথার জন্য এ্যালোপ্যাথি NSAID গ্রুপের ঔষধAspirine জাতীয় ঔষধ ইত্যাদি সেবনের ইতিহাস।

ü  দীর্ঘ সময় অনাহার থাকার ইতিহাস।

ü  অতি আহার এর ইতিহাস।

ü  দীর্ঘ দিনের মানসিক চাপ।

ü  ঋতুস্রাব বন্ধের ইতিহাস (এক্টোপিক প্রেগনেন্সীর ক্ষেত্রে) ইত্যাদি।

v  সমস্ত পেটে তীব্র ব্যথা হবে।

v  প্রচন্ড বমি হবে এবং বমিবমি ভাব থাকবে।

v  পেট ব্যথার সাথে প্রায়ই জ্বর থাকে।

v  ব্যথার সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া থাকতে পারে। বিশেষ কিছু রোগের ক্ষেত্রে মলত্যাগ অথবা বায়ু নিঃসরন না হওয়াকালো বর্নের মলত্যাগ হওয়া ইত্যাদি থাকতে পারে।

            চিহ্ন বা Sign

v  রোগীকে অস্থির দেখাবে।

v  রোগীর মুখমন্ডলে উদ্বিগ্নতা থাকবে।

v  শ্বাস প্রশ্বাস ছোট ছোট এবং ঘন ঘন হবে।

v  পালস বেড়ে যেতে পারে।

v  রক্তচাপ বেশী পাওয়া যেতে পারে।

v  দেহের তাপমাত্রা বেশী থাকবে।

v  রোগীর পেট পরীক্ষা করলে,

ü  রোগীর পেটে হাত দিলে উত্তাপ অনুভূত হবে।

ü  রোগী পেটে চাপ দিতে দেবে না এবং ব্যথার কথা বলবে।

ü  তীব্রতা এবং রোগের উপর নির্ভর করে সমস্ত পেটে শক্ততা এবং আড়ষ্টতা থাকতে পারে/থাকবে।

ü  পেট পাথরের মতো শক্ত ও ফোলা পাওয়া যেতে পারে।

v  মারাত্মক ক্ষেত্রে,

ü  বাওয়েল সাউন্ড পাওয়া যাবেনা।

ü  শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে পেটের নড়াচড়া হবে না।

 প্যাথলজীক্যাল ইনভেস্টিগেশন (Pathological investigation)

 প্যাথলজীক্যাল পরীক্ষা নির্ভর করে মূলতঃ রোগীর অবস্থার উপর এবং চিকিৎসক কি ধরনের রোগ সন্দেহ করছেন তার উপর। তবে সচরাচর যে সকল প্যাথলজীক্যাল ইনভেস্টিগেশন দেয়া হয়সেগুলো হলো
Æ Blood for T.C, D.C, E.S.R, Hb%, Blood grouping ‡ Rh factor
Æ U.S.G of the whole abdomen.
Æ Serrum amylase.
Æ Plane X-ray
Æ Ba-meal X-ray
Æ Blood Sugar.
Æ Serrum billirubin.
Æ E.C.G

 ব্যাবস্থাপনা (Management)

Ü  মুখে কিছু খাওয়ানো যাবেনা। তবে বিশেষ প্রয়োজনে চামচ পরিমান পানি দেয়া যেতে পারে। ঠান্ডা পানি দিয়ে ঠোঁট মুছে দিলে রোগীর পিপাসা কম পায়।

Ü  অবশ্যই ব্যথা কমানোর উদ্দেশ্যে কোন প্রকার এ্যালোপ্যাথিক ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না। ইতিপূর্বে তা করে থাকলে সাথে সাথে সে সকল ঔষধ বন্ধ রাখতে হবে এবং রোগীকে আরো গভীর পর্যবেক্ষন করতে হবে।

Ü  দ্রুত রোগ নির্নয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

Ü  রোগীকে আস্বস্ত করতে হবে।

Ü  প্রতি ৩০ মিঃ পর পর রোগীর পালসব্লাড প্রেশার এবং টেম্পারেচার দেখা উচিত।

Ü  রোগী শেষ কতক্ষন আগে মল-মূত্র ত্যাগ এবং বায়ু নিঃসরন করছে সে বিষয়ে জানতে হবে।

Ü  I.V Saline দিতে হবে।

Ü  রক্তদানের প্রয়োজন মনে হলে তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ü  ব্লাড গ্রুপিংক্রস ম্যাচিংডোনার সংগ্রহ ইত্যাদি।

 চিকিৎসা (Treatment)

হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাঃ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা লক্ষন নির্ভর সুতরাং অবশ্যই লক্ষন সদৃশ্যে হোমিওপ্যাথিক ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। নিচে এ্যাকিউট এ্যাবডোমেনের কিছু থেরাপিউটিক্স দেয়া হলোযদিও মনে রাখতে হবেপ্রথমত: উপরে উল্ল্যেখিত “PORII” এর শেষের “I”টি ছাড়া অর্থাৎ “Inflammatory ” অবস্থা ছাড়া অন্য ক্ষেত্রগুলোর অধিকাংশই সার্জিক্যাল এবং তাদের চিকিৎসা ও ম্যানেজমেন্ট সেভাবেই খুব সতর্কতার সাথেই করতে হবে। দ্বিতীয়ত: থেরাপিউটিক্স -এ লিখা নেই কিন্তু লক্ষন সদৃশ্যে আছেসাধ্যের মধ্যে হলেসেই ঔষধেই রোগী আরোগ্য করবে।

কলচিকাম অটামঃ প্রচুর বায়ুসঞ্চার জনিত কারনে পেট বড় ও উঁচু। খাবার দেখলে বা খাবারের গন্ধে বমিভাব। পেটে অস্বস্তির কারনে রোগী পা ছড়িয়ে রাখেগুটাতে পারে না।

লাইকোপোডিয়ামঃ মুত্রত্যাগের সময় হাত দিয়ে তলপেট ধরে রাখে। পেটে প্রচুর বায়ুসঞ্চারসহকোষ্ঠকাঠিন্যসহ বা কোষ্ঠকাঠিন্য ছাড়া পেট ফোলা ও ব্যথা।

ডায়োস্করিয়াঃ পেটে বায়ু সঞ্চার জনিতকারনে পেট ফোলা ও ব্যাথা।

ন্যাফেলিয়ামঃ বায়ু নি:সরনের সময় বৃহদন্ত্রে গড়গড় শব্দ হয়।

হেডিওমা ১X: যা খায় তাতেই পেটব্যথার সৃষ্টি হয়।

কেলিয়াম বাইঃ আহারের কিছু পরেই পেটে কেটে ফেলার মতো বেদনা। ব্যথা স্থান পরিবর্তনশীলএক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। একটি বিন্দু মতো স্থানে ব্যথা।

ম্যাগ্নেসিয়াম ফস ৬X: অত্যাধিক বায়ু নি:সরন করে এবং তাতে আরাম পায়। বায়ু নি:সরন না হলে পেটব্যথা শুরু হয়।

প্লাম্বাম মেটালিকামঃ পেট থেকে মেরুদন্ড পর্যন্ত দড়ি দিয়ে টেনে ধরার মতো অনুভূতি। ইত্যাদি ইত্যাদি নির্বাচিত হতে পারে।

এ্যাকিউট এ্যাবডোমেন এ যে সকল হোমিওপ্যাথিক ঔষধ খুব সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত এবং নিম্নশক্তিতে ব্যবহার করা উচিত নয়।

● এনাগেলিস  ইচিনেশিয়া  হিপার সালফ  লাইকো  সাইলি  মার্ক সল ইত্যাদি অন্যতম।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.