Header Ads

Tonsillitis and its homeopathic treatment টনসিলাইটিস বা টনসিল প্রদাহে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

Tonsillitis and its homeopathic treatment


টনসিলাইটিস (Tonsillitis)  বাংলায় যা টনসিল প্রদাহ বা তালুমূল গ্রন্থি প্রদাহ বলা হয়। আলজিবের দুই পাশের স্থানকে টনসিল বলা হয়। যদি আলজিবের উভয় পার্শ্বের গ্রন্থিসমূহ ফুলে যায় এবং লালবর্ণ হয়ে উঠে, গরম হয় এবং চটচটে সর্দি জমে তাহলে তালুমূল প্রদাহ বা টনসিলাইটিস হয়েছে বুঝতে হবে। এই রোগের সাথে জ্বর জ্বর ভাব জ্বর গলাব্যথা, খাবার গ্রহণে অসুবিধা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেয়। 

টনসিলাইটিস (Tonsillitis) এর কারণ হিসাবে যে সকল বিষয় পরিলক্ষিত হয় তাহলোঃ- শীতল, ঠান্ডা ও আর্দ্র বাতাস লাগা, রাতের বেলায় বাতাস লাগানো, পা ভিজা, অতিরিক্ত শরীর উত্তপ্ত হওয়ার পরপরই শীতল বাতাসে ঘাম  শরীরে শুকিয়ে যাওয়া এবং ঠান্ডা লাগা, বৃষ্টির পানিতে অধিক পরিমানে ভেজা, অস্বাস্থ্যকর স্থানে বসবাস, স্যাঁতসেঁতে স্থানে বাস, হাম, ডিপথেরিয়া, বাত জ্বর প্রভৃতি রোগের ফলাফল হিসাবে টনসিলাইটিস হতে পারে। অনেক বিশেষজ্ঞ মতামত পোষণ করেন যে, বাবা মায়ের টনসিলাইটিস রোগ থাকলে সন্তানের হবার সম্ভাবণা থাকে।  


একিউট টনসিলাইটিস (Tonsillitis) এ দুই পাশের টনসিল ফুলিয়া যায়। অথবা প্রথমে এক পাশের একটি পরে অন্য পাশের টনসিল ফুলিয়া সুপারির মত হইয়া যায়। বেদনা কান হইতে ঘাড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। গলার ভেতর লাল হয় এবং আলজিবটিও ফুলিয়া লালবর্ণ হয়ে যায়। অনেক সময় টনসিল বৃদ্ধি পেয়ে গলনালী বন্ধ হয়ে যায় ফলে ঢোক গিলেতে বা খাদ্যদ্রব্য গিলিতে ভীষণ কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে ভয়ানক ব্যাঘাত ঘটে, মুখ দিয়া লালা ঝরে, সেই সাথে জ্বর দেখা দেয়। চিকিৎসা না হলে জ্বর তীব্র আকার ধারণ করে এবং টনসিল পাকিয়া ফাটিয়া যায়। 

ক্রনিক টনসিলাইটিস (Tonsillitis)- একিউট টনসিলাইটিস সাধারণত দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রদাহ কমিয়া যায় এবং রোগ আরোগ্যর পর টনসিলের স্বাভাবিক অবস্থা অপেক্ষা সামান্য একটু মাত্র বড় হইয়া থাকে। ্আবার প্রতিকুল পরিবেশের প্রভাবে বার বার টনসিল প্রদাহ ঘুরে আসে অর্থাৎ স্থায়ী ভাবে রোগ আরোগ্য হয় না। অনেক সময় সার্জারী করার পরও পুনরায় উক্ত জায়গায় প্রদাহের সৃষ্টি হয় এই রোগের অবস্থাটিকেই ক্রনিক টনসিলাইটিস বলা হয়ে থাকে। 

টনসিলাইটিস (Tonsillitis)- ৩টি শ্রেণীতে বিভক্ত

ক) ক্যাটার‌্যাল- এটি প্রদাহ হয়ে থাকে। 
খ) ফলিকিউলার- আলজিবের নিকট পোস্তদানার মত ক্ষুদ্র দানাকর ফলিকিলস গ্লান্ড  আক্রান্ত হয়। 
গ) সপুরেটিভ- টনসিলাইটিসের এই অবস্থাটি অপেক্ষাকৃত জটিল হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ইহা কুইনসি নামে অভিহিত। 

টনসিলাইটিসে (Tonsillitis) ব্যবহৃত হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ 


Aconitum Napellus [Acon] 6 , 30 , 200 ঃ রোগর প্রাথমিক অবস্থায় ইহা বেশ উপকারী। ফাটিয়া ছিড়িয়া ফেলার ন্যায় তীব্র বেদনা। গলা বেদনার সহিত অস্থিরতা, ভয়, প্রবল পিপাসা, কাশি ও জ্বর থাকিলে  Aconitum Napellus 6, অথবা Aconitum Napellus 30, অথবা Aconitum Napellus 200 ব্যবহার করা যেতে পারে এবং আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়। 

Belladonna [Bell] 3X, 6,  30, 200 ঃ প্রদাহের প্রথমাবস্থায় ইহা উপকারী। প্রদাহের পুঁজ জমিবার পূর্বেই ইহা ব্যবহৃত হয়, পুঁজ হইলে আর Belladonna [Bell] ব্যবহার করা উচিৎ নয়। টনসিল ফুলিয়া অতিরিক্ত দপদপানি যন্ত্রণা, প্রদাহের স্থানটি লাল, জ্বর ও মাথা ব্যথা। ডানদিকের টনসিল ফুলিলে ইহা ভাল কাজ করে। ব্যথা হঠাৎ আসে হঠাৎ যায়। প্রদাহের জন্য গলনালী কুঞ্চিত হয়ে পড়ে শক্ত/নরম খাদ্য খাওয়ার সময় নাকের মধ্যে উঠে আসে। নিম্নক্রম Belladonna [Bell] 3X, 6, 30 দ্বারা ইহার অধিক উপকার পাওয়া য়ায়। 

Mercurius Solubilis Hahnemanni [Merc] 6, 30, 200 ঃ রোগীর মুখে প্রচুর দুর্গন্ধ, জিহ্বাতে সাদা ও ময়লা লেপ থাকে। মুখ হতে লালা নিঃসরণ সত্ত্বেও পিপাসা। অতিরিক্ত ঘাম কিন্তু ঘামে কোন উপকার হয় না। আক্রান্ত স্থানে যতটুকু বেদনা হওয়া উচিত বলে মনে হয় তা অপেক্ষা রোগী কম বেদনা অনুভব করে। টনসিল ফুলিয়া গেলে অথবা তাতে পুঁজ উৎপন্ন হয়ে গেলে উচ্চ শক্তির একমাত্রা Mercurius Solubilis Hahnemanni [Merc] প্রয়োগ করিয়া কিছুটা ধৈর্য ধারণ করতে হবে এতে আশানুরুপ ফল পাওয়া যায়। 

Hepar Sulphuris Calcareum [Hep] 3, 6, 30, 200 ঃ পুরাতন প্রদাহে এই ঔষধটি ব্যবহৃহ হয়ে থাকে। পুঁজ হইবার উপক্রম হইলেই ইহা ব্যবহৃত হয়। হিপারের টনসিল খুব ফোলে এবং রোগীর গলায় কাঁটা বেঁধার ন্যায় বেদনা অনুভব হয়। ইহার নিম্নক্রম ব্যবহারে পুঁজ নিম্নে থাকিলে ভাসিয়া উঠে এবং এবং টনসিল ফাটিয়া যায়। উচ্চক্রমে প্রায় গ্লান্ড বসিয়া যায়। যদি রোগ পুরাতন আকার ধারণ করে তবে কিছু দিন পর পর শক্তি পরিবর্তন করে এক মাত্রা প্রয়োগ করে অপেক্ষা করলে রোগীর ধাতুদোষ সংশোধন হইয়া পীড়া আরোগ্য হয়। অতিশয় শীত কাতরতা, দারুণ ঠান্ডা লাগার প্রবৃত্তি, সামান্য ঠান্ডাতেই অসুস্থ হওয়া Hepar Sulphuris Calcareum [Hep] প্রয়োগ লক্ষণ। 

Phytolacca Decandra [Phyt] 6, 30, 200 ঃএকিউট অথবা ক্রনিক উভয় প্রকারের রোগেই এটি শ্রেষ্ঠ ঔষধ। রোগী অত্যন্ত দূর্বল ও অবসন্ন, মুখ চোখ যেন বসিয়া গিয়াছে। চোখের চারদিকে কালিমা পড়ে, মুখে ঘা হয়, জিহ্বার ধারে ফোষ্কার মত উদ্ভেদ বের হয়, জিহ্বার সামনের অংশ, গলার ভেতর, তালু ও টনসিল অত্যন্ত লাল হয়। মুখ হতে প্রচুর পরিমাণে লালা নিঃসৃত হয় এরূপ লক্ষণ থাকলে Phytolacca decandra [Phyt] খুবই উপকারী। রোগীর মার্কসলের  সদৃশ লক্ষণ থাকে কিন্তু পার্থক্য হচ্ছে মার্কের মত প্রচুর ঘাম ও জিহ্বায় দাঁতের ছাপ থাকে না। টনসিল পুরাতন আকার ধারণ করে, শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়, টনসিল একটি সুপারির গোটার ন্যায় দেখা যায় এমনটা হলে Phytolacca Decandra [Phyt] তেই উপকার হবে। 

Baryta carbonica [Bar-c] 6, 30, 200  ঃ ক্রনিক টনসিলাইটিস হলে এটি একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। টনসিল প্রদাহ অবস্থায় ইহার রোগীর শক্ত খাদ্যদ্রব্য গিলিতে অক্ষমতা থাকে কিন্তু  সাইলেসিয়ার ন্যায় তরল খাদ্য ও পানীয় সে সহজেই গিলিতে পারে। মুখ গহ্বরের, তালুর পক্ষাঘাত লক্ষণ থাকলে অনেক সময় খাদ্য বস্তু নাসিকা পথে বহির্গত হতে দেখা যায়। পায়ের ঘাম নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যদি টনসিলাইটিস (Tonsillitis) বা গলক্ষত দেখা দেয় তাহলে  Baryta carbonica [Bar-c] একটি উৎকৃষ্ট ঔষধ। রোগের শুরুতে পুঁজোৎপত্তির পূর্বে এটি প্রয়োগ করলে আর পুঁজ হতে পারে না। যাদের প্রায়ই টনসিলাইটিস (Tonsillitis) হয়, সামান্য ঠান্ডা লাগলেই টনসিল ফোলে, বেদনা হয় এমনকি ক্রমশঃ পাকিয়া পুঁজ পর্যন্ত নির্গত হয় তাদের ক্ষেত্রে এটি অধিক কার্যকরী। গলার ডানদিকে অধিক আক্রমণ হয় ঢোক গিলিতে কষ্ট হয়। যে সকল রোগীর বার বার টনসিলে আক্রান্ত হয় তাদের উচ্চ শক্তিতে একমাত্রা Baryta carbonica [Bar-c] প্রয়োগে পুনরাক্রমণ বন্ধ হয়।

Lachesis [Lach] 6, 30, 200ঃ টনসিল প্রথমে বামদিকে আক্রমণ হয়ে পরে ডানদিকে পরিচালিত হয়। টনসিল আক্রমন হলে আলজিবের দুিই কিম্বা এক পাশে সুপারির মত ফুলে ওঠে, লালবর্ণ  হয়, গলায় চটচটে সর্দি লেগে থাকে। টনসিল লাল বর্ণ হলেও তার মধ্যে একটু নীলাভ দেখায়। অনেক সময় সম্পূর্ণ নীল হয়। গলার মধ্যে গোলার মত কি একটা পদার্থ থাকার অনুভূতি, ঢোক গিলিতেও তাহা যেন অপসারিত হয় ন। কখনও হঠাৎ গলনালী বন্ধ হইয়া যাইবার ভাব হয়, গলার বাহিরে বেদনা থাকে, তাতে হাত দিলেও কষ্ট হয়। Lachesis [Lach] এর রোগী শক্ত খাদ্য দ্রব্য গিলতে পারে কিন্তু তরল দ্রব্য পান করতে পারে না। টনসিল পাকলে কিছুই খেতে পারে না, খাদ্য দ্রব্য নাক মুখ দিয়ে বাহির হয়ে আসে। 

Apis mellifica [Apis] 6, 30, 200 ঃ টনসিলে জ্বালা, হুল ফোটানবৎ ব্যথা, ফোলা, Apis mellifica [Apis] পরিচায়ক লক্ষণ। টনসিল ও আলজিব ফোলা ও বড় হওয়া। গলা ও জিব ফোলে বলিয়া নিঃশ্বাস ফেলিতে কষ্ট হয়।  বিশেষ করে ডান টনসিলের প্রদাহ সহ সমগ্র কন্ঠ ঝিল্লীর শোথবৎ স্ফীতিসহ টনসিল ও গলনালী উজ্জল লাল ও গোলাপী বর্ণ । গলার ভেতর ও বাহিরে ফোলা। উষ্ণ পানীয়ে যন্ত্রণার বৃদ্ধিহয়। জিহ্বার গোড়ার সমস্ত স্থানের প্রদাহ ও ফোলা খুব দ্রুত বাড়তে থাকলে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে ও পানাহারে কষ্ট হলে Apis mellifica [Apis] প্রযোজ্য। এর আরও  একটি বিশেষ লক্ষণ হচ্ছে অবসন্নতা ও নিদ্রালুতা। 

[ লক্ষণ অনুযায়ী আরও অন্য ঔষধ প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে; তবে একবারে একটি ঔষধ এক সাথে একাধিক ঔষধ প্রয়োগ করলে রোগীর শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ফলে পরবতীতে রোগীর লক্ষণ সংগ্রহ কষ্ট কর হয়ে পড়ে] 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.